শুধু তাই নয়, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু বোমা বানানোর যে অভিযোগ তুলেছিল তাও শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারে নি তারা। এমনকি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি
সংস্থা বা আইএইএ তার সর্বশেষ চূড়ান্ত রিপোর্টে বলেছে, ২০০৩
সাল থেকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কখনই
সামরিক দিকে মোড় নেয়নি। এতে ইরান যেমন পেয়েছে বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরমাণু কর্মসূচি
পরিচালনার ন্যায্য অধিকার, তেমনি প্রতিরোধ ও কূটনীতির মাধ্যমে বিশ্বে
শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ভিত্তি পেয়েছে।
আসলে পরমাণু ইস্যুতে সমঝোতা ও নিষেধাজ্ঞা
প্রত্যাহারের মতো পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে ইরানের প্রতিরোধমূলক অবস্থান ও
মিত্রদেশগুলোর সহযোগিতার কারণে। আর এর মাধ্যমে ইরান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার
কূটনৈতিক সফলতারও নতুন প্রমাণ তুলে ধরেছে। তেহরানের রাষ্ট্রীয় নীতি ছিল সত্যের
পক্ষে অবিচল; মিথ্যার মিশেলে কূটনীতি কলুষিত হয় নি কখনো।
ইরানের ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার
পর এখন হিসাব চলছে- কে কী পেল, কার কী লাভ-ক্ষতি। অনেকের কাছে প্রশ্ন- এখন কী
ইরান ও আমেরিকার মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে? আমেরিকা ও ইরান কী
কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে? ইরানের সঙ্গে চুক্তি করে আমেরিকা কীভাবে লাভবান
হবে? ইরান ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হবে এবং তা কোন পর্যায়ে যাবে? ইরানের
ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে রাশিয়ার সঙ্গে কী ইরানের সম্পর্ক কমে যাবে? অথবা
ইরানের কাছ থেকে কে বেশি লাভবান হবে- রাশিয়া নাকি আমেরিকা? নিষেধাজ্ঞার
দিনগুলোতে চীনসহ যেসব দেশ বন্ধু হয়ে ইরানের পাশে ছিল তাদের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের
ধরন এখন কেমন হবে? আলোচনা চলছে, যে সৌদি আরব ও ইসরাইল
ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিরোধিতা করে আসছিল তারা এখন কী করবে? সিরিয়া, ইরাক
ও ইয়েমেন ইস্যুতে ইরানের ভূমিকা এখন কী হবে?
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইরান কতটা
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে?
প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের
সম্পর্ক কেমন হবে? নিজের অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী করতে পারবে? প্রশ্ন
আসছে- পরমাণু চুক্তি ও ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর চূড়ান্তভাবে সারা
বিশ্বে এর কী প্রভাব পড়বে এবং ইরান কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারবে? এসব
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে। তবে আলোচনার গভীরে যাওয়ার আগে ইরান সম্পর্কে একটা
সম্যক ধারণা প্রয়োজন। কারণ ইরানের সামগ্রিক সক্ষমতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে মোটামুটি
একটা ধারণা থাকলে পরমাণু চুক্তি ও নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার প্রভাব সম্পর্কে বোঝা সহজ
হবে।
এক নজরে ইরান
ইরান মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিশাল ভূখণ্ডের দেশ।
এর মোট আয়তন হচ্ছে ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ বর্গ কিলোমিটার। রাজধানী তেহরান। ইরান
হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী ইরানের মোট
জনসংখ্যা সাত কোটি ৮৫ লাখ। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৮। মোট
জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ শিয়া মুসলমান,
৪ ভাগ সুন্নি এবং বাকি এক ভাগ খ্রিস্টান, ইহুদি, জয়থ্রুস্ট
ও বাহাই। দেশটির মাথাপিছু আয় ১২,৮৩৩ মার্কিন ডলার তবে কোনো কোনো হিসাব মতে
মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ১৫,০০০ ডলার। সে কারণে ইরানকে বলা হয় উচ্চ-মধ্যম
আয়ের দেশ। মুদ্রার সরকারি নাম রিয়াল তবে স্থানীয়ভাবে রিয়ালকে তুমান বলা হয়।
দেশটিতে শিক্ষার হার শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি।
ইরান হচ্ছে বিশ্বের সবেচয়ে বড় আয়তনের দেশগুলোর
তালিকায় ১৮তম যা ব্রিটেন, ফ্রান্স,
জার্মানি ও স্পেনের মোট আয়তনের সমান। ইরানের
পূর্বে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান, উত্তর-পূর্বে তুর্কমেনস্তিান, উত্তরে
কাস্পিয়ান সাগর, উত্তর-পশ্চিমে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এবং পশ্চিমে তুরস্ক ও
ইরাক। উত্তরে কাস্পিয়ান সাগরের অপর পাড়ে রয়েছে কাজাখস্তান ও রাশিয়ার মতো বৃহৎ দেশ।
আর দক্ষিণে রয়েছে পারস্য উপসাগর। সাগরের ওপারেই আছে কুয়েত, সৌদি
আরব, বাহরাইন, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
কৌশলগত ভৌগোলিক
গুরুত্ব
পারস্য উপসাগরের বিরাট এলাকাজুড়ে ইরানের
সীমান্ত এবং সবচেয়ে গুরুৎপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে হরমুজ প্রণালী। এ প্রণালী দিয়ে
প্রতিদিন সারাবিশ্বের জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বিরাট অংশ পার হয়। এ প্রণালীর বড়
অংশের নিয়ন্ত্রণ ইরানের হাতে। প্রণালীর অন্য পাড়ে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
পারস্য উপসাগর থেকে বের হলেই ডানে পড়বে ওমান সাগর আর বাম পাশে থাকবে আরব সাগর যার
উপকূলে রয়েছে পাকিস্তানের অবস্থান। পারস্য উপকূল ছেড়ে সামনে এগুলে পড়বে বিশাল ভারত
মহাসগর যার বাম পাশে ভারত। আর ডানে গেলে এডেন উপসাগর যার উপকূলে যুদ্ধবিধ্বস্ত
ইয়েমেন দাঁড়িয়ে। এই ইয়েমেনের উপকূলে রয়েছে আরেক গুরুত্বপূর্ণ প্রণালী নাম তার বাব
আল-মান্দেব। এ প্রণালীও হরমুজ প্রাণীর মতোই তেল-গ্যাস থেকে শুরু করে পশ্চিমা
বিশ্বের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও প্রাচ্যের দেশগুলোর সব ধরনের বাণিজ্যের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়- প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যাওয়ার একমাত্র সহজ পথ হচ্ছে এই
বাব আল-মান্দেব। বিকল্প পথ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
ইরানের দক্ষিণে রয়েছে পারস্য উপসাগর তেমনি
উত্তরে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্রদ যার নাম কাস্পিয়ান সাগর। এ দুটি সাগর ইরানকে
ভৌগোলিক দিক দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ইরান হচ্ছে
বিশ্বের অন্যতম প্রধান পাহাড়ঘেরা দেশ। ককেসাস,
জাগ্রোস আর আলবুর্জ পর্বতমালা ঘিরে রেখেছে সারা
ইরানকে।
গ্যাস ও তেল সম্পদ
বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে আরও একটি কারণে ইরানের
সবিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ইরানকে বলা হয় এনার্জি সুপারপাওয়ার। ইরানের হাতে রয়েছে
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি (শতকরা ১৫ ভাগ) গ্যাস-সম্পদের মজুদ। বর্তমানে রাশিয়ার চেয়েও
ইরানে গ্যাসের মুজদ বেশি। জ্বালানি তেলের মজুদের দিক দিয়ে বিশ্বে ইরানের অবস্থান
চতুর্থ। দেশটির হাতে রয়েছে সারা বিশ্বের মোট তেল সম্পদের শতকরা ১০ ভাগ। মনে করা হয়
ইরানে আরও বহু এলাকা রয়েছে যেখানে তেল-গ্যাসের খনি আবিষ্কৃত হবে। তেল রপ্তানিকারক
দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে ইরান।
সামরিক বাহিনী
ইরান সারা বিশ্বে এখন যেসব কারণে বিশেষ আলোচিত
তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এর সামরিক শক্তি। সামরিক শক্তি নিয়ে
পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় না গিয়েও বলা যায়- ইরানের হাতে রয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ
সক্রিয় সেনা সদস্য। এছাড়া আছে সাড়ে তিন লাখ রিজার্ভ সেনা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বাসিজ, যার সদস্য সংখ্যা দশ লাখের বেশি। এতে পুরুষের
পাশাপাশি নারী সদস্যও রয়েছে। সব মিলিয়ে ইরান যেকোনো সময় দশ লাখের বেশি
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা মোবিলাইজ করতে পারে এবং এ সুবিধা বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি
দেশের জন্য রয়েছে। ইরানের হাতে রয়েছে নিজস্ব সামরিক শিল্প-কারখানা যেখানে ট্যাংক, আর্মড
পারসোনেল ক্যারিয়ার, গাইডেড মিসাইল, সাবমেরিন, সামরিক
নৌযান, গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার, রাডার সিস্টেম, হেলিকপ্টার এবং
জঙ্গিবিমান তৈরি করা হয়। ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে- ইমাদ ও ফজরের মতো
উন্নত প্রযুক্তির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এছাড়া ইরানের কারখানায় তৈরি করা
হচ্ছে- হুত, কাউসার, জেলাল,
ফতেহ,-১১০,
শাহাব-৩ ও সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র এবং নানা ধরনের
ড্রোন।
বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন
১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্র"য়ারি
ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার পরপরই ইরান মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের বাধার
মুখে পড়ে। সম্পর্ক ছিন্ন করা, রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে
ইরানকে বাধা দেয়া তথা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা অনেকটা নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়। সে
কারণে ইরানের নেতারা বিশেষ করে ইমাম খোমেনি ও বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ
আলী খামেনি অভ্যন্তরীণভাবে উন্নতি করার জন্য জোর দিয়েছেন। ফলে ইরান যেমন খাদ্য
উৎপাদনে অগ্রগতি লাভ করেছে তেমনি প্রযুক্তি খাতে এগিয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের
সম্পদশালী দেশগুলো যেখানে সবাই প্রায় আমেরিকা ও অন্য উন্নত দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল
সেখানে ইরান নিজেই নিজের উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। বিদেশি শ্রমিক ছাড়াই
নিজস্ব লোকবলের ওপর ভর করে সে উন্নয়ন প্রচেষ্টা এগিয়ে যাচ্ছে। বিপ্লবের ৩৫ বছর পরে
এসে ইরান এখন সব ক্ষেত্রে অনেকটাই নিজের পায়ে ভর করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। এরই
ধারাবাহিকতায় বায়োটেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি এবং ওষুধ শিল্পে বিরাট উন্নতি
করেছে। ইরান এখন মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি গাড়ি নির্মাণকারী দেশ। পরিবহন খাতে
বিরাট উন্নতি ঘটিয়েছে। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের ভেতরে ইরান হচ্ছে নির্মাণ, গৃহস্থালিতে
ব্যবহার্য জিনিসপত্র, খাদ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদন, অস্ত্র
ও তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ এবং পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদনে সবচেয়ে
অগ্রগামী দেশ। ২০০৯ সালের ২ ফেব্র"য়ারি ‘সাফির’
নামে সর্বপ্রথম একটি রকেট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে
ইরান সর্বপ্রথম কক্ষপথে তার কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপনে সাফল্য অর্জন করে। নিজস্ব
প্রযুক্তিতে তৈরি স্যাটেলাইট ও দেশে নির্মিত লাঞ্চারের মাধ্যমে রকেট উৎক্ষেপণে
বিশ্বে যে ৭টি দেশ সক্ষম ইরান এখন তার একটি। এছাড়া, ইউরেনিয়াম
হেক্সাফ্লুরাইড উৎপাদন ও পুরো ‘পরমাণু জ্বালানি চক্র’ নিয়ন্ত্রণে
সক্ষম এলিট ক্লাবের সদস্য দেশ ইরান। আন্তর্জাতিক নানা প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে- ২০১৮
সালের মধ্যে ইরান বিশ্বের বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে চতুর্থ অবস্থানে
চলে যাবে যা হবে চীনের পরের অবস্থান।
কৃষিখাত
কৃষিখাতে এ দেশটির উন্নতি দেখলে বিস্মিত হতে
হয়। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বা ফাও’র তথ্য মতে- ইরান হচ্ছে বিশ্বের প্রধান পাঁচটি
দেশের মধ্যে একটি যে কিনা কমলা, মাল্টা ও লেবুজাতীয় ফল উৎপাদনে সেরা অবস্থানে
রয়েছে। এছাড়া, শসা, ক্ষীরা,
খেজুর,
বেগুন,
ডুমুর,
পেস্তা,
নাশপাতি,
আখরোট ও তরমুজ উৎপাদনে বিশ্বের সেরা পাঁচ দেশের মধ্যে একটি ইরান।
নানা জাতের আপেল, আঙুর,
বিভিন্ন ধরনের বাদাম, ছোলা, গম, নানা
ধরনের শাক-সবজিসহ প্রায় সব ধরনের কৃষিপণ্য এখানে উৎপাদিত হয়। এছাড়া, দুগ্ধজাত
সব ধরনের পণ্য, ডিম ও মুরগির অভ্যন্তরীণ চাহিদা
মিটিয়ে ইরান বিদেশে রপ্তানি করে। দুম্বা, ভেড়া, গরু, উট
ও উট পাখি উৎপাদনের মাধ্যমে গোশতের বিরাট অংশের চাহিদা অভ্যন্তরীণভাবেই মেটানো হয়।
ফলে দেশটি খাদ্যে অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কৃষিখাতের এই অভূতপূর্ব
উন্নয়ন দেশটিকে মধ্যপ্রাচ্যে তো বটেই,
সারাবিশ্বে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। এই সুযোগ এখন
কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার মতো বিরাট দেশে ইরান কৃষিপণ্য, ফলমূল, শাক-সবজি, চিংড়ি
ও দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি
শুরু করেছে।
নগরায়ন
ইরান হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান দ্রুত বেড়ে
চলা নগরায়নের দেশ। ১৯৫০ সালে দেশটিতে শতকরা ২৯ ভাগ মানুষ শহরে বসবাসত করত ২০০২
সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৬০ ভাগে। এ সংখ্যা গত এক দশকে আরও বেড়েছে। জাতিসংঘের
ধারণা মতে- ২০৩০ সালের মধ্যে ইরানে শতকরা ৮০ ভাগ নগরায়নের কাজ শেষ হবে।
পর্যটন
ইরানে যেমন রয়েছে পাহাড় আর সাগর, তেমনি
রয়েছে বিশাল মরুভূমি, কোথাও নদ-নদী আবার কোথাও সুবিস্তৃত সমতল ভূমি।
ভূমি-বৈচিত্রের মতো এখানকার আবহাওয়াতেও রয়েছে বেশ বৈচিত্র্য। সারা ইরানে বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ
ও শীত- এই চারটি ঋতু রয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ বিশাল এলাকাজুড়ে যখন প্রচণ্ড শীত
কিংবা তুষারাবৃত তখন দক্ষিণে (পারস্য উপসাগর সংলগ্ন) দিব্যি বসন্তের হাওয়া। এর
পাশাপাশি রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও পারস্য সাম্রাজ্যের নানা স্মৃতিচিহ্ন।
পাহাড়, সাগর, নদ-নদী আর জঙ্গলাকীর্ণ বৈচিত্র্যময় ভূমি এবং আবহাওয়ার
কারণে ইরানে পর্যটকের ভিড়ও লেগে থাকে সারা বছর।
শুধু পারস্য উপসাগরের কিশ দ্বীপ ভ্রমণ করে প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে ইরানে বিদেশি পর্যটক এসেছে ৫০ লাখের বেশি। এশিয়ার বহু দেশ, ইউরোপ
ও উত্তর আমেরিকা থেকেই আসে বেশি পর্যটক। ইউনেস্কোর হিসাব মতে- ইরান বিশ্বের ১০ম
প্রধান পর্যটনের দেশ; অভ্যন্তরীণ পর্যটনেও ইরান বিশ্বের অন্যতম।
অর্থনীতি,
সামরিক শক্তি ও ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে যে
দেশটি এত গুরুত্ব বহন করছে সেই দেশটির ওপর দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে মসৃণ
হয়নি পথচলা। নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজের উন্নয়ন নিজে করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে তবে
কাক্সিক্ষত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থেকে গেছে দেশটি। ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ ইরানের ওপর থেকে
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে আমেরিকা ও তার মিত্ররা। এ নিয়ে চলছে নানা
আঙ্গিকে নানা আলোচনা, উঠছে বহু প্রশ্ন। এ পর্যায়ে আমরা সেই সব
প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করব।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কী প্রভাব
পড়বে ইরানে
ইরানের ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা
প্রত্যাহারের পর দেশটির অর্থনীতিতে এরই মধ্যে পড়েছে ইতিবাচক প্রভাব। বিশেষ
কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে ব্যাংকিং ও আমদানি-রপ্তানি খাতে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার
পর প্রথম দিনেই ১০০০’র বেশি লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলা হয়েছে
বলে জানিয়েছেন ইরানের চেম্বার অব কমার্সের প্রধান মোহসেন জালালপুর। তিনি জানান, প্রায়
দুই মাস আগে ইরান চেম্বার অব কমার্স,
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং শিল্প, খনি
ও বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রথম দিনেই এসব এলসি খোলা হবে বলে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা
ও সব প্রক্রিয়া ঠিক করে রেখেছিল। প্রথম দিনে যেসব এলসি খোলা হয়েছে তার মূল্যমান ১০
কোটি ডলার। জরুরি কাঁচামাল আমদানির জন্য এসব এলসি খোলা হচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে
এসব কাঁচামাল এসে পৌঁছালে দেশে পণ্যের উৎপাদনে বিশেষ গতি আসবে বলে তিনি আশা করেন।
এর পাশাপাশি ‘সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিনান্সিয়াল
টেলিকমিউনিকেশন’ বা সুইফট-এর সঙ্গে নতুন করে ইরান সংযুক্ত হয়েছে। সুইফটের
সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অর্থই হচ্ছে- ইরান এখন বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে
অর্থনৈতিক লেনদেন করতে পারবে।
ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার দিনই ১৯
জানুয়ারি ইরানের স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বেড়ে যায়। ওইদিন সার্বিক শেয়ার সূচক শতকরা
৭ ভাগ বাড়ে। এর বিপরীতে সৌদি আরবসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর শেয়ার সূচকে বড় ধরনের
পতন হয়। গত ১২ বছরের মধ্যে এটি ছিল বড় ধরনের দরপতন। এর বাইরে তেল উৎপাদন প্রতিদিন
পাঁচ লাখ ব্যারেল বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ইরান সরকার। এছাড়া, রাজধানী
তেহরানে চলছে নানা ধরনের অর্থনৈতিক আলোচনা,
সম্মেলন;
কোনো কোনো দেশের সঙ্গে হচ্ছে আর্থিক ও
বাণিজ্যিক ইস্যুতে নানা চুক্তি। প্রেসিডেন্ট
রুহানি জোরালো আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন,
ইরান হবে এ অঞ্চলের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি।
প্রেসিডেন্ট রুহানি দেশে শতকরা ৮ ভাগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সরকারি ও
বেসরকারি খাতে ৫,০০০ কোটি ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে
জানান। এছাড়া, তেল খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে ২০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ
দরকার। এসব বিনিয়োগ হলে, ইরান হয়ে উঠতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন
বাণিজ্যকেন্দ্র। ইউরোপের ‘গেটওয়ে’
হিসেবে ইরানের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যেতে পারে; এমনকি
কেউ কেউ মনে করেন, দুবাইয়ের বিকল্প অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠতে পারে
ইরানে।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণ কী
পরমাণু ইস্যুতে মূলত মার্কিন নেতৃত্বে ইরানের
ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি বা এনপিটি-তে
স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ইরানের ন্যায্য অধিকার ছিল শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পরমাণু
কর্মসূচি পরিচালনা করা। কিন্তু বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর চাপ ও ষড়যন্ত্রের
মাধ্যমে ইরানকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। বিপ্লবের আগে এই ইরানকেই আমেরিকা
পরমাণু স্থাপনা নির্মাণ করে দেয়ার চুক্তি করেছিল। কিন্তু যখনই ইসলামি বিপ্লব সফল
হলো তখনই তারা সে চুক্তি থেকে পিছিয়ে গেল। পরে ইরান যখন রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে নিজের
চেষ্টা-প্রচেষ্টায় পরমাণু কর্মসূচি শুরু করল তখন সে কর্মসূচিকে অবৈধ ও সামরিক
উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বাধা সৃষ্টি করল আমেরিকা ও তার মিত্ররা
এবং কয়েক দফায় ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল। কিন্তু এতে ইরানের বিপ্লবী সরকার
বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ড. আহমাদিনেজাদের সরকার অনেকটা শক্ত অবস্থান নেয় এবং পরমাণু
কর্মসূচি জোরদার করে। ফলে ২০১২ সালে ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা
ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। কিন্তু তাতে স্বস্তিতে ছিল না আমেরিকা। কারণ ইরানের কাছ
থেকে ইউরোপের অনেক দেশ তেল আমদানি করত। এর মধ্যে গ্রিসের মতো দেশ বিশেষ সুবিধা
পেত। নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে ইরান থেকে ইউরোপের দেশগুলো তেল নিতে পারছিল না
কিন্তু চীন ও ভারতের মতো দেশ ঠিকই তেল নিতে থাকে। আবার যে পরমাণু কর্মসূচিকে
কেন্দ্র করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় সে পরমাণু কর্মসূচি ঠেকানো তো যায়ই
নি বরং দিন দিন উন্নতি লাভ করে এবং একপর্যায়ে ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে
থাকে তেহরান। আবার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইরানকে যেভাবে কাবু করে ফেলা যাবে বলে মনে
করেছিল আমেরিকা তাও হলো না বরং ইরান তার স্থানীয় মুদ্রার দাম কমিয়ে রপ্তানি আয় ঠিক
রাখার চেষ্টা করল। এর মধ্যে ইরান সামরিক ও প্রযুক্তিখাতেও অনেক উন্নতি লাভ করল।
ইরান কোনোভাবেই আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে নত হয়নি।
২০১১ সালের ১১ মার্চ ভয়াবহ সুনামিতে জাপানের
ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ স্থাপনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে জনগণের চাপের মুখে
সারাদেশের পরমাণু বিদ্যুৎ স্থাপনা বন্ধ করে দেয় জাপান সরকার। এতে জাপানের মতো
অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশের মোট জ্বালানি চাহিদার ৩০ শতাংশ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে
দেশটিতে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। ২০০৮ সালের মন্দা কাটিয়ে ওঠা দক্ষিণ
কোরিয়া, চীন, ভারত ও ইউরোপের দেশগুলোতেও জ্বালানি চাহিদা বাড়তে থাকে। অথচ ইরানের ওপর
নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। যে কারণে এসব দেশ
আমেরিকার ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং এক পর্যায়ে ১০টি দেশকে ইরান থেকে তেল আমদানির
সুযোগ দিতে বাধ্য হয় আমেরিকা। এতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সম্ভাবনা আরও দুর্বল হয়ে
পড়ে।
ইরান যেহেতু একটি বৃহৎ দেশ এবং রাশিয়াসহ
বহুসংখ্যক দেশের সঙ্গে এর স্থল ও নৌপথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে সে কারণে
ইরানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কাবু করা সম্ভব ছিল না। দিন দিন অবস্থা এমন হচ্ছিল যে, বিশেষ
কিছু ওষুধসহ একান্তই মার্কিন কিছু জরুরি পণ্য ছাড়া সবই ইরানে পাওয়া যাচ্ছিল এবং
ইরানের জনজীবন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। এ অবস্থায় নামে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা
থাকলেও তা তেমন কার্যকর ছিল না। এছাড়া,
আমেরিকার সঙ্গে শত্রুতার কারণে ইরান দিন দিন
মার্কিনবিরোধী বলয়ে প্রভাবশালী দেশ হয়ে উঠছিল। তারই নজির হচ্ছে সিরিয়া ইস্যু
যেখানে রাশিয়া ও ইরান সামরিক সহায়তা দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে টিকিয়ে
রেখেছে। সামগ্রিকভাবে এসব কারণে মার্কিন মিত্ররাও আমেরিকার ওপর আস্থা হারিয়ে
ফেলছিল। নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ভাবতে থাকে এবং কোনো কোনো দেশ মার্কিন বলয়
থেকে বেরিয়ে আসারও চিন্তা করছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের প্রভাব ধরে রাখতে এবং
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে এমন ভাব বজায় রেখে ইরানকে কোনোমতে একটি চুক্তির আওতায়
আনা যায় কিনা সে পথ খুঁজছিল আমেরিকা। সৌদি আরব ও ইসরাইলের মতো আঞ্চলিক প্রভাবশালী
শক্তির বিরোধিতা সত্ত্বেও আমেরিকা এ চুক্তির পথে এগিয়ে যায়। ইরানে ড. হাসান
রুহানির সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকটা মার্কিন উদ্যোগেই পরমাণু আলোচনা শুরু হয় এবং
শেষ পর্যন্ত উইন-উইন চুক্তি হয়েছে। চুক্তির পর মিত্রদের মনোভাব নিয়ে মার্কিন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছিলেন,
‘চুক্তি না করলে মিত্রদের
নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ধরে রাখা যেত না এবং দিন দিন ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
ক্ষয়ে আসছিল।’ সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমেরিকা
পরিস্থিতি এমন করে তুলেছিল যে, চুক্তি বা সমঝোতা না হলে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের
প্রশ্ন আসত। কিন্তু ইরানের মতো একটা দীর্ঘ যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিরোধকামী
শক্তির সঙ্গে মার্কিন সরকারের যুদ্ধ করার মতো অবস্থা এখন নেই। এছাড়া, বারাক
ওবামার ক্ষমতার শেষ সময়। তিনি এ যুদ্ধের ঝুঁকি নেবেন নাÑএটাই স্বাভাবিক। ফলে সৌদি আরব ও ইসরাইলকে অখুশি করে এবং তেহরানকে ছাড় দিয়ে
হলেও চুক্তি করা আমেরিকার জন্য জরুরি হয়ে পড়েছিল। ফলে আমেরিকা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি
মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এক্ষেত্রে হয়তো প্রেসিডেন্ট
বারাক ওবামার যুদ্ধ-বিরোধী মানসিকতা কাজ করে থাকতে পারে। ইসরাইলের বৃহত্তর
নিরাপত্তার দিকটিও বিবেচনায় নিতে হয়েছে মার্কিন প্রশাসনকে।
কে কী পাবে
ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর
সঙ্গত কারণেই হিসাব নিকাশ শুরু হয়েছে- আন্তর্জাতিক অঙ্গনেÑকে কী পাবে; কার কী লাভ। প্রথমেই বলতে হবে আমেরিকার কথা। এই দেশটির
সঙ্গে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে ১৯৮০ সালের দিকে। তারপর নানা ঘটনার পরও
ইরান সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেনি আমেরিকার সঙ্গে। পরমাণু চুক্তি সই ও নিষেধাজ্ঞা
প্রত্যাহারের পরও আমেরিকার সঙ্গে ইরান সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে নাÑতা ছিল পরিষ্কার। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি আগেই ঘোষণা
করেছেনÑআমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে না ইরান। বলার অপেক্ষা রাখে না, পররাষ্ট্রনীতির
ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতার কথাই চূড়ান্ত। ফলে কূটনৈতিক সম্পর্কের কথা বাদ দিয়ে
আমেরিকার সঙ্গে যে সম্পর্ক হতে পারত তা হচ্ছে বাণিজ্য সম্পর্ক। ক্ষেপণাস্ত্র
ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা না দিলেও ইরান-মার্কিন সম্পর্ক এর চেয়ে বেশি কিছু হতো না। ইরান
মনে করে, আমেরিকা কূটনীতির নামে গুপ্তচরবৃত্তি করে। এছাড়া, দেশটির
সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে তেহরান তুলনামূলক নির্বিঘেœ
তার নানা প্রকল্প এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এসব
কারণে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ইরান আমেরিকা থেকে বোয়িং বিমান এবং জরুরি পণ্য
ছাড়া তেমন কিছু আমদানি করবে না। সম্ভবত এ ক্ষেত্রেও ‘নাক
বাঁচাতে’ আমেরিকা ইরানের ওপর এখনো নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে বাধ্য হচ্ছে; শুধুমাত্র
মার্কিন ব্যবসায়ীরা ইরান থেকে কার্পেট,
ক্যাভিয়ার ও পেস্তা আমদানি করতে পারবেন। তবে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে মার্কিন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে
পারবে। ইরানের তেলক্ষেত্রে তারা বিনিয়োগও করতে পারবে। আমেরিকার সঙ্গে ইরানের
অনেকগুলো তিক্ত ঘটনার কারণে যেহেতু ইরান এ সম্পর্ককে খুব বেশি এগিয়ে নেবে না সে
কারণে তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরও আমেরিকা সরাসরি তেমন একটা
লাভবান হতে পারবে না।
কেমন হবে ইরান-রাশিয়া
সম্পর্ক
অনেকের ধারণা ছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন ছয়
জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর ইরান হয়তো আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পড়বে। কিন্তু সে
ধারণা সঠিক নয়। হ্যাঁ, মার্কিন ও ইউরোপীয় পণ্যের প্রতি ইরানের জনগণের
একটা বড় অংশের দুর্বলতা রয়েছে কিন্তু মার্কিন হস্তক্ষেপকামী নীতির কারণে আমেরিকাকে
এড়িয়ে চলবে ইরান। আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা না রাখার সুবিধা-অসুবিধার চিত্র
তেহরানের কাছে খুবই স্পষ্ট। সে কারণে ইরান যতটা সম্ভব আমেরিকাকে এড়িয়ে চলবে। এর
বিপরীতে ইরান গত কয়েক বছরে বিশেষ করে পরমাণু ইস্যুতে রাশিয়াকে মিত্র হিসেবে
পেয়েছে। রুশ সহযোগিতায় নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ স্থাপনা। এছাড়া, ছয়
জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় রাশিয়া অনেক সহযোগিতা করেছে। এর পাশাপাশি আরব
বিশ্বে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র সিরিয়ার পাশে ইরান যেমন শক্তভাবে
দাঁড়িয়েছে তেমনি রাশিয়াও কোমর বেঁধে নেমেছে। সেখানে অভিন্ন লক্ষ্য হচ্ছে-
সন্ত্রাসীদের পরাজিত করা এবং প্রতিরোধের প্রতীক বাশার আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা।
পাশাপাশি ইরান ও রাশিয়া দু’ দেশই আমেরিকাকে অভিন্ন শত্রু দেশ মনে করে।
ন্যাটো সামরিক জোটের পূর্বমুখী বিস্তৃতিকে ইরান-রাশিয়া কেউই ভালো চোখে দেখে না।
এছাড়া, ইউরোপে যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের ‘মিসাইল ডিফেন্স শিল্ড’ গড়ে
তোলা হচ্ছে তাকেও একই রকমের হুমকি মনে করে ইরান ও রাশিয়া। এসব কারণে নিষেধাজ্ঞা
পরবর্তী সময়ে ইরান রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে তার প্রমাণও মিলতে শুরু করেছে। ইরানকে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৩০০ সরবরাহ করছে রাশিয়া। ইরানের কৃষিখাতেও সহযোগিতার সব
দিক খতিয়ে দেখছে মস্কো। আবার তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর ইরানকে প্রধান
খাদ্য সরবরাহকারী দেশ হিসেবে নিয়েছে রাশিয়া। এজন্য শুল্ক ও
অন্য বাধা দূর করেছে। ইরান কয়েকদিন আগে ৫০০
ট্রাক ফলমূল ও শাকসবজি পাঠিয়েছে রাশিয়ায়। ইরানের দুগ্ধজাত পণ্যও যাবে রাশিয়ায়।
এছাড়া, দু’ দেশ নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন করবে যা মার্কিন ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এজন্য দু দেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করছে।
প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ইরান রাশিয়ার
ওপর খানিকটা নির্ভর করবে বা আস্থা রাখবে। কারণ পশ্চিমারা ইরানের কাছে প্রতিরক্ষা
প্রযুক্তি সরবরাহ করতে নিরাপদ মনে করবে না। আবার ইরানকে যদি কোনো অস্ত্র ও
প্রযুক্তি দেয়ও তারপর কতদিন সে সম্পর্ক স্থায়ী হবে তার নিশ্চয়তা নেই। আবার কখনো
সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা দিলে এসব অস্ত্র ও প্রযুক্তি আধুনিকায়ন করা কঠিন হবে। সে
ক্ষেত্রে রাশিয়া হবে নিরাপদ গন্তব্য। এরইমধ্যে রাশিয়া ইরানের কাছে এমআই-৮
হেলিকপ্টার এবং টি-৯০ ট্যাংক সরবরাহ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। রাশিয়ার অত্যাধুনিক
অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তি যে অত্যন্ত কার্যকরী সিরিয়ায় তা প্রমাণ হয়ে গেছে। এছাড়া, ইরানের
সঙ্গে আরও দুটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করেছে। ইরানও বলেছে, তার
বাণিজ্যিক বহরে যে ৬০০ বিমান লাগবে তার একটা অংশ নেবে রাশিয়া থেকে। এছাড়া, ইরানের
সামরিক খাতে সামগ্রিক আধুনিকায়নের যে প্রশ্ন রয়েছে সে ক্ষেত্রে রুশ সহায়তা নিতে
পারে ইরান। ইরাক ও সিরিয়া ইস্যুতে ইরান এবং রাশিয়ার মধ্যে যে আন্তঃসম্পর্ক গড়ে
উঠেছে সে সম্পর্ক দিন দিন শক্তিশালী হবে বলে ধারণা করা যায়। এর পাশাপশি
মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান,
মধ্যএশিয়া,
ককেশাস অঞ্চল এবং কাস্পিয়ান সাগর অঞ্চল নিয়ে
ইরান ও রাশিয়ার অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে।
রুহানি সরকারের নীতি হচ্ছে চীন, রাশিয়া
ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা। ইরানে কর্মরত রুশ কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যও এখন
রাশিয়ায় রপ্তানি করতে পারবে সহজেই। এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, সাংহাই
সহযোগিতা সংস্থায় ইরানের অন্তর্ভুক্তির জন্য রাশিয়া ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
ইরান বর্তমানে এ সংস্থার পর্যবেক্ষক সদস্য। এ সংস্থায় যোগ দিলে বিদ্যমান কাঠামোর
ভেতরে থেকে ইরান-রাশিয়া সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্র
ছাড়াও বৈজ্ঞানিক, শিক্ষা ও পর্যটন ক্ষেত্রে দু’ দেশের
সহযোগিতা অনেক বাড়বে। এরইমধ্যে দু’
দেশের জনগণের জন্য ভিসা সুবিধার নানা দিক নিয়ে
আলোচনা চলছে। রুশ ও ইরানের নাগরিকরা ভিসামুক্তির সুবিধা পেতে পারে। ইরান যে পর্যটন
খাতে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে,
রুশ পর্যটকরা হতে পারে তার মূল শক্তি। রাশিয়ায়
নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মস্কোয় দু’
দেশের ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বর্তমানে
ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলার। আগামী কয়েক বছরের
মধ্যে তা ৭০০০ কোটি ডলারে নেয়া হবে। রাশিয়া ইরানের তেল ও গ্যাসখাতে বিনিয়োগ এবং
সহযোগিতা করার কথা বলেছে। তবে, বহুদিন পর আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে ফিরে আসায়
ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতিযোগিতা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রুশ বিশেষজ্ঞ গিওর্গি মিরস্কির একটি উক্তি বিশেষভাবে বিবেচনায়
নেয়া যেতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার কাছে পরমাণু শক্তিধর ইরানের চেয়ে
পশ্চিমাপন্থি ইরান বেশি বিপজ্জনক।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা বেশি
নির্ভরযোগ্য অংশীদার এবং একমাত্র শক্তিশালী দেশ যাদের ওপর ইরান নির্ভর করতে পারে।’ সে
ক্ষেত্রে সম্পর্ক রক্ষা ও তা লালনের প্রশ্নে রাশিয়া ইরানের সঙ্গে অনেক বেশি সহনশীল
হবে তা আশা করাই যায়।
চীন-ইরান সম্পর্ক কেমন হবে
২০১৪ সালে তেহরান ও বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য
বিনিময়ের পরিমাণ ছিল ৫,২০০ কোটি ডলার। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের
দাম কমে যাওয়ায় ২০১৫ সালে বাণিজ্যের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। ইরানের ওপর থেকে
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় চলতি বছর ইরান ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ আবার বাড়বে
বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চলতি সপ্তাহে ইরান সফর করেছেন এবং
তিনি হচ্ছেন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ইরান সফর করা দ্বিতীয় সরকার প্রধান। সবার
আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ইরান সফর করেছেন।
জিনপিংয়ের সফরের সময় তেহরান ও বেইজিংয়ের মধ্যে
১৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া,
আগামী ১০ বছরে ইরান ও চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের
পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি ডলারে নেবে বলেও সমঝোতা হয়েছে। ইরান ও চীনের মধ্যকার এই
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিশেষ করে ইরানকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। দু’ দেশের
মধ্যে বিজ্ঞান প্রযুক্তি সহযোগিতা অনেক বাড়বে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। ২০১২ সালের
মার্কিন কঠোর নিষেধাজ্ঞার পর চীনই ছিল ইরানের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। চীনের
জ্বালানি তেলের মোট চাহিদার ১০ শতাংশ সরবরাহ করে ইরান। পরমাণু চুক্তির ক্ষেত্রে এ দেশটি
বড় বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ইরানের বিভিন্ন তেল ও
গ্যাস ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে চীন- সে ঘোষণা আগেই দিয়েছে দেশটি।
ইরান সফরের সময় চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং বলেছেন, দু’ দেশের
সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিতে তিনি ইরান সফর করছেন। ইরান ও চীনের এই সম্পর্ক থেকে
শুধু দু’ দেশের জনগণ উপকৃত হবে না বরং আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তিতেও তা ভূমিকা রাখবে।
ইরানের সঙ্গে তার দেশ বিশেষ করে জ্বালানি খাতে কৌশলগত সম্পর্ক চায় সে কথাও তিনি
জানিয়েছেন। জিনপিং আশা করেছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণে আঞ্চলিক
নিরাপত্তা বাড়বে।
ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর পুরো ইউরোপের সঙ্গে
ইরানের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার আগে
থেকেই ফ্রান্স থেকে ইরান ১২০টি এয়ারবাস কেনার বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়েছে। এছাড়া, ইরান
যে পাঁচ লাখ ব্যারেল তেল বাড়তি উত্তোলন করবে তার বড় অংশই যাবে ইউরোপের বাজারে।
ইরানের মোট তেলের একটা বড় অংশের ক্রেতা ইউরোপ। নিষেধাজ্ঞা পূর্ববর্তী সময়ে
আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এবং
যৌথ বাণিজ্য ছিল। এখন নতুন করে ইউরোপীয় গাড়ি কোম্পানি ইরানের বাজারের সুযোগ নিতে
প্রস্তুত রয়েছে। ২০ জানুয়ারি বার্তা সংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে
সাংবাদিক ডেভিড ম্যাকহুগ ও ডেভিড কোয়েলিগ বলেছেন, ‘সাত কোটি ৮৫ লাখ
জনসংখ্যার বাজার হচ্ছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের মধ্যে ইরান
হচ্ছে সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে মিশরের
পরেই ইরানের অবস্থান। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর এখন প্রচুর পরিমাণে অবকাঠামো
নির্মাণ, মোটরগাড়ির রাস্তা নির্মাণ হবে। গাড়ি নির্মাণ শিল্প হবে ইরানের বাজারে হট কেক।
নিষেধাজ্ঞার আগে ফ্রান্সের পেজো ও রেনো গাড়ির সবচেয়ে বড় মার্কেট ছিল ইরান।’
এ দুই সাংবাদিক তাদের প্রতিবেদনে আরও বলেছেন, ডেইমলার
এজি ট্রাক ডিভিশন গত ১৮ জানুয়ারি বলেছে,
তারা যৌথভাবে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করবে।
আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা ইরানে অফিস খুলবে। ডিভিশনের প্রধান উলফ্যাং বার্নহার্ড
এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরানে বাণিজ্যিক গাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ইরানে প্রধানত মার্সিডিজ বেঞ্জ ব্রান্ডের ট্রাকই বেশি চলে।
ফেডারেশন অব জার্মান ইন্ডাস্ট্রিজের
প্রেসিডেন্ট উলরিখ গ্রিলো বলেছেন, ইরানের শিল্প অবকাঠামোর আধুনিকায়ন হবে ব্যাপক
মাত্রায় এবং পাঁচ বছরে রপ্তানিও হবে দ্বিগুণ। বর্তমানে বছরে ২৪০ কোটি ইউরোর
রপ্তানি রয়েছে।
তবে ইউরোপের সঙ্গে বাণজ্যিক সম্পর্ক আরও বেশি
মসৃণ করতে কিছু সংস্কারের কথা বলছে তারা। তাদের মতে- ইরানের আমলাতন্ত্র, ধীর
গতির সরকারি কর্মকাণ্ড ও শুল্ক -এ কয়টি বিষয় বাধা হিসেবে কাজ করবে। এগুলোর নিরসন
জরুরি। এ অবস্থার মধ্যে ব্রিটেনের সঙ্গে ইরানের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর কথা
বলেছেন ইরান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং তিনি ব্রিটিশ বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেছেন।
১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে এক টেলিফোন সংলাপে
ড. রুহানি এ আশা করেন। জবাবে ক্যামেরন বলেছেন,
ইরানের সঙ্গে লন্ডন তার ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক
অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া,
প্রতিদিনই প্রায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী
ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদল তেহরান সফর করছে এবং বিনিয়োগ ও ব্যবসার নানা দিক নিয়ে কথা
বলছে।
কী করবে সৌদি আরব ও ইসরাইল
ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি নাখোশ
ছিল প্রতিবেশী সৌদি আরব এবং ইরানের আঞ্চলিক প্রধান শত্রু ইসরাইল। পরমাণু কর্মসূচি
ইস্যুকে কেন্দ্র করে বহুবার ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালানোর হুমকি
দিয়েছে যদিও তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। আর ইসরাইলের আগ্রাসনে সহযোগীর ভূমিকা
পালন করতে চেয়েছিল সৌদি আরব। ইরানের ওপর বিমান হামলা চালাতে সৌদি সরকার তার
আকাশসীমা ব্যবহারের সুযোগ দিতে চেয়েছিল ইসরাইলকে। এছাড়া, মার্কিন
কংগ্রেস লবিকে অর্থের বিনিময়ে পরমাণু চুক্তি থেকে মার্কিন সরকারকে পিছিয়ে আনার
চেষ্টা করেছে সৌদি আরব। এ অভিযোগ ইরানের। এসব ঘটনায় পরিষ্কার হয় যে, সৌদি
আরব এ অঞ্চলে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে কিন্তু ইরানকে
প্রতিবেশী হিসেবে গ্রহণে রাজি নয়। আর ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালোন তো
সেদিন বললেন যে, তাকে যদি ইরান এবং উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস থেকে একটিকে
বেছে নিতে বলা হয় তাহলে তিনি আইএস-কে বেছে নেবেন। তবে তাদের চাওয়াই তো শেষ কথা নয়; তাতে
ইরানের খুব বেশি কিছু একটা যায়-আসেও না। ইরান তার নিজস্ব যোগ্যতা বলে আন্তর্জাতিক
অঙ্গনে জায়গা করে নিয়েছে এবং দিন দিন সে আসন পোক্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় ইরানের ওপর
থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে এ দুটি দেশের জন্য কী ধরনের প্রভাব পড়বে নিশ্চয় তা
ভাবনার বিষয়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- সৌদি আরব ও
ইসরাইলের মধ্যে প্রকাশ্য জোট গড়ে উঠতে পারে। ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে বলেছেন,
তিনি সৌদি আরবকে সুন্নি মিত্র মনে করেন। আর
তুরস্ক তো আগেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। তুর্কি প্রধানমন্ত্রী
রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, মিত্র হিসেবে ইসরাইলকেই তার দরকার। সে ক্ষেত্রে
এই তিন দেশের একটা জোট গড়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ ইরানের বিরোধিতা করতে গিয়ে ইসরাইলের
মতো শক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে এ দুটি দেশ। অনেকটা ‘আপন
নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা’র মতো ঘটনা। তবে তাদের এসব ভূমিকা ইরানকে
ঠেকাতে পারবে না। কারণ ইরান এতদিন নিষেধাজ্ঞার ভেতরে থাকার পরও ইসরাইল কিংবা সৌদি
আরব কাউকেই তোয়াক্কা করেনি; সবসময় নিজের মতো করে পথ চলেছে; এখন
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশের সুযোগ পেলে ইরান এসব দেশকে আলাদা করে বিবেচনায় নেবে
সেটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
আঞ্চলিক কী প্রভাব পড়বে
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সব কিছু ঠিক থাকলে বড়
ধরনের আর্থিক সুবিধা আসবে ইরানের হাতে। এতে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা যেমন বাড়বে তেমনি
বাড়বে আঞ্চলিক মিত্র ইরাক, সিরিয়া,
লেবানন,
হিজবুল্লাহ ও হামাসের সঙ্গে সহযোগিতা।
সৌদি আরবকে এরইমধ্যে বাজেট ঘাটতি মোকাবিলা করতে
হচ্ছে এবং ইরান-বিরোধী ভূমিকায় নামার কারণে বহু দেশকে সরাসরি অর্থ দিয়ে তাদেরকে
নিজের পক্ষে রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে,
সিরিয়া,
ইরাক ও ইয়েমেন যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ
করতে হচ্ছে সৌদি আরবকে। হিজবুল্লাহকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। এতসব
ব্যয়বহুল সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে না ইরানকে। সিরিয়ায় সামরিক উপদেষ্টার কাজ করতে
গিয়ে কিছু অর্থ ব্যয় হবে তবে তা সৌদি আরবের মতো অত বিশাল বাজেটের হবে না। আবার
ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও হিজবুল্লাহর মতো শক্তি মোকাবিলা করার পরিকল্পনা থেকে যে ৩৪ জাতির
সামরিক জোটের ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি তরুণ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মাদ বিন সালমান, সে
জোটকে যদি আংশিকভাবেও কার্যকর করতে হয় তাহলে পয়সা খরচ করে বহু দেশকে পক্ষে রাখতে
হবে। তাতে সৌদি আরবের মর্যাদা বাড়বে না বরং যুদ্ধবাজ ও সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত
হবে দেশটি। এরইমধ্যে ইরানের কূটনীতির কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে সৌদি আরব। আবার
ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন সম্পর্ক যাই হোক না কেন তাতে হামাসের মতো
প্রভাবশালী সংগঠনের রোষানলে পড়বে সৌদি রাজপরিবার। অন্যদিকে, আর্থিক
সুবিধা ও সৌদি আরবের এ বৈরীভাবের সুযোগ নিয়ে হামাস ও হিজবুল্লাহকে সব ধরনের
সহযোগিতা বাড়িয়ে দেবে ইরান -তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সৌদি আরবের ভেতরে শিয়া
মুসলমানদের যে আন্দোলন রয়েছে তাও জোরদার হতে পারে। শিয়াপ্রধান বাহরাইনেও একই
অবস্থা দেখে দেবে বলে মনে হয়।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইরানের
ভূমিকা
পরমাণু ইস্যু কিংবা সিরিয়া ইস্যুতে ইরান
এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটা আলাদা আসন তৈরি করে ফেলেছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে
যাওয়ার পর জাতীয় অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ বেড়ে গেলে দেশটি সামরিক, রাজনৈতিক
ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ব্যাপক প্রভাবশালী হয়ে উঠবে বলে মনে হয়। ওপেকে যেমন ভূমিকা
থাকবে তেমনি সাংহাই সহযোগিতা পরিষদ ও ব্রিকস-এর কার্যকর সদস্য হিসেবে আবির্ভূত হতে
পারে। তখন চীন, রাশিয়া, ইরান,
পাকিস্তান ও ভারতের মতো দেশকে নিয়ে ভিন্ন
অর্থনীতির বলয় গড়ে উঠতে পারে। সৌদি পৃষ্ঠপোষকতায় যে উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়েছে
মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে, সে উগ্রবাদের রাশ টেনে ধরতে ইরানের সহযোগিতা
জরুরি হয়ে উঠবে। সে অবস্থান অনেক বেশি শক্তিশালী হবে যদি সিরিয়া সংকেটের রাজনৈতিক
সমাধান হয় এবং প্রেসিডেন্ট আসাদ ক্ষমতায় টিকে যান। ইরান তাতে অনেক বেশি প্রভাবশালী
হয়ে উঠবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ে ভিন্ন হিসাব-নিকাশ হতে পারে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে
ইরানের সম্পর্ক কেমন হবে তার একটা ইঙ্গিত এরইমধ্যে আমরা পাচ্ছি। ইরানের নিকটতম
প্রতিবেশী দেশ হচ্ছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। দুটি দেশের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক
চমৎকার। ইরানে রয়েছে আফগানিস্তানের বিরাটসংখ্যক উদ্বাস্তু। এছাড়া, পাকিস্তানের
সঙ্গে ইরানের সম্পর্কটা কোন পর্যায়ে তা বোঝা গেছে সাম্প্রতিক ভূমিকায়। সৌদি আরবের
সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠতা থাকার পরও পাকিস্তান তার পক্ষ নিয়ে ইরান-বিরোধী জোটে যোগ দেয়নি
কিংবা ইরানের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেয়নি বরং কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে যা
প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সবভাবেই ইরানের পক্ষে গেছে;
সৌদি আরবের জন্য এই ঘটনা ছিল চপেটাঘাত। সৌদি
জোটে সেনা না পাঠানোর ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তান মূলত এ জোটের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতাকে
চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে
পাকিস্তানের জনগণ ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে। জ্বালানি
নিরাপত্তার জন্য ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার বিকল্প ভাবছেন না পাকিস্তানের
অর্থনীতিবিদরা। ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় ইরানে পাকিস্তানি চাল ও
অন্যান্য পণ্য রপ্তানির পথও খুলে যাবে। তাছাড়া,
পাকিস্তানের চলমান বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় ইরান
থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস নেয়ার কোনো বিকল্প নেই দেশটির জন্য। এদিকে, ইরাকের
মতো দেশের সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্ক রয়েছে এবং সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করে
সৌদি আরব ও আমেরিকা যে অসুবিধায় পড়েছে তার পুরো ফায়দা নিয়েছে ইরান। নিষেধাজ্ঞা উঠে
যাওয়ার পর দু’ দেশের মধ্যে সহযোগিতা অনেক বাড়বে এবং বাড়ানোর সুযোগ তৈরি
হবে -তা সন্দেহাতীত।
এছাড়া,
সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত
ও কাতারের মতো প্রতিবেশীরাও ইরানের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।
সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর সে পথে হেঁটেছে একমাত্র বাহরাইন।
আমিরাত সম্পর্ক ডাউনগ্রেড করেছে এবং কাতার ও কুয়েত সৌদি চাপে রাষ্ট্রদূত ফেরত
নিয়েছে কিন্তু সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। আর ওমান তো বহুদিন থেকে ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ
সম্পর্ক রেখে চলেছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে
সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ইঙ্গিতও মিলেছে।
ইউনাইটেড আরব শিপিং কোম্পানি ইরানের সঙ্গে আবার
ব্যবসা শুরু করেছে। ২০ জানুয়ারি ২০১৬ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। ইরানের
সঙ্গে সৌদি আরবের চরম উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক থাকার পরও
শিপিং লাইন্সে ব্যবসা শুরু হলো। কোম্পানির একটি
সূত্র বলেছে, রাজনীতির চেয়ে তাদের কাছ ব্যবসায়িক স্বার্থ অনেক বড়। কুয়েতে
এ কোম্পানির সদর দপ্তর রয়েছে। ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ইউনাইটেড আরব শিপিং কোম্পানি
জানিয়েছে, তারা এরইমধ্যে ইরান থেকে পণ্য পরিবহন এবং অন্য দেশ থেকে ইরানে পণ্য আনার কাজ
শুরু করেছে।
১৯৭৬ সালে দুবাইয়ে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়
এবং এর সদস্য হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত,
বাহরাইন,
সৌদি আরব,
কাতার,
কুয়েত ও ইরাক। এর মধ্যে শুধু কাতারের শেয়ার
রয়েছে শতকরা ৫১ ভাগ। সৌদি আরবের শেয়ার ৩৫ ভাগ এবং বাকি শেয়ার অন্য চারটি দেশের।
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে এই শিপিং লাইন্স ইরানের সঙ্গে ব্যবসা স্থগিত করেছিল।
নয়া ইরান
কূটনীতি ও প্রতিরোধমূলক অবস্থান যে বৈরীশক্তির
মোকাবিলায় অনেক বেশি কার্যকর তা নতুন করে দেখিয়ে দিয়েছে ইরান যার ফলে তেহরানের
সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে চুক্তি করতে এবং ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য
হয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। পাশাপাশি মুসলিম নামধারী রাষ্ট্র হলেই যে মুসলিম উম্মাহর
মৌলিক উন্নয়ন সাধনে কাজ করবে তা ভাবারও সুযোগ নেই; সে কথা প্রমাণ করে
দিয়েছে সৌদি আরব। বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ইরানের সঙ্গে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব যে
শান্তির পথ রচনা করল সবাই সে পথ অনুসরণ করবে এটাই চায় শান্তিকামী মানুষ। এ পথ
অনুসরণ করলে যেমন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি,
নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আসতে পারে তেমনি আঞ্চলিক
দেশগুলোও উন্নয়নমুখী হতে পারে। পরমাণু চুক্তি শুধু ইরানের ভেতরেই উন্নয়নের জোয়ার
সৃষ্টি করবে না, সে চুক্তির সুযোগ নিয়ে আরও বহু দেশে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য
সৃষ্টি হবে এমন আশা মোটেই অতিরঞ্জিত কিছু নয়। ইরানের বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও শান্তির
স্বপক্ষের লোকজনকে এখন সচেতন থাকতে হবে যাতে কেউ স্যাবোটাজ করে ইরান ও ছয়
জাতিগোষ্ঠীর মধ্যকার চুক্তি নস্যাৎ করতে না পারে। যারা এই শান্তির সুবাতাসে খুশি
হতে পারেনি তাদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে ইরানের নেতৃত্বকে।
সূত্র: রেডিও তেহরান এবং সাপ্তাহিক।
ইসরাইলের কাছে যমের মতো, ইরানের জয় বিশ্বের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের জয়, আমেরিকার দালাল তথা অশুভ শক্তির পরাজয় স্বাধীন রাষ্ট্র বলে যারা দম্ভকরে ইরান তাদের দেখিয়ে দিয়েছে প্রকৃত স্বাধীনতা কাকেবলে?
প্রিয় পাঠক ভাই, বেশ কয়েক বছর পূর্বে ইরান নিজস্ব গাড়ী কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যুদ্ধ বিমানও ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানাচ্ছে।
ইরান আর পাকিস্তান এর মধ্য ভালো সম্পর্ক তৈরী করে দাও আল্লাহ যাতে ভারতকে শায়েস্তা করতে পারি ।