IQNA

কোরআনে বর্ণিত সাবা নগরী কোথায়

4:49 - January 18, 2023
সংবাদ: 3473189
তেহরান (ইকনা): মূলত ইয়েমেনের সম্রাট ও সে দেশের অধিবাসীদের উপাধি  ছিল ‘সাবা’। তাফসিরে ইবনে কাসিরের বর্ণনামতে,  ‘তাবাবেয়া’ সমপ্রদায়ও ‘সাবা’ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তারা ছিল সে দেশের ধর্মীয় সম্প্রদায়। আল্লাহ তাআলা তাদের সামনে জীবনোপকরণের দ্বার উম্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তাদের দিয়েছিলেন অফুরন্ত নিয়ামতে ভরা একটি স্বাস্থ্যসম্মত শহর। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই সাবাবাসীদের জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন—দুটি উদ্যান, একটি ডানদিকে, অন্যটি বামদিকে। বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের রবের দেওয়া রিজিক ভোগ করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। উত্তম নগরী এবং ক্ষমাশীল রব।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১৫)

 

তাফসিরবিদদের মতে, ইয়েমেনের রাজধানী সানআ থেকে তিন মনজিল দূরে মাআরেব নগরী অবস্থিত ছিল। এখানে ছিল সাবা সমপ্রদায়ের বসতি। দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকায় শহরটি অবস্থিত ছিল বিধায় উভয় পাহাড়ের ওপর থেকে বৃষ্টির পানি বন্যার আকারে নেমে আসত। ফলে শহরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যেত। দেশের সম্রাটরা উভয় পাহাড়ের মাঝখানে একটি শক্ত ও মজবুত বাঁধ নির্মাণ করলেন। এ বাঁধ পাহাড় থেকে আগত বন্যার পানি রোধ করে পানির একটি বিরাট ভাণ্ডার তৈরি করে দেয়। পাহাড়ি ঢলের পানিও এতে সঞ্চিত হতে থাকে। এই বাঁধে সে যুগের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এতে পানির বারটি খাল তৈরি করে শহরের বিভিন্ন দিকে পৌঁছানো হতো। সব খালে একই গতিতে পানি প্রবাহিত হতো এবং নাগরিকদের প্রয়োজন মেটাত।

 

শহরের ডানে ও বায়ে অবস্থিত পাহাড়দ্বয়ের কিনারায় ফল-মূলের বাগান তৈরি করা হয়েছিল। এসব বাগানে সব রকম বৃক্ষ ফলমূল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হতো। কাতাদা (রহ.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, একজন লোক মাথায় খালি ঝুড়ি নিয়ে গমন করলে গাছ থেকে পতিত ফলমূল দ্বারা তা আপনা-আপনি ভরে যেত। হাত লাগানোরও প্রয়োজন হতো না। (ইবনে কাসির)

 

সেই শহরের আবহাওয়া এতটাই বিশুদ্ধ ছিল যে সমগ্র শহরে মশা-মাছি ছারপোকা ও সাপ-বিচ্ছুর মতো ইতর প্রাণীর নামগন্ধও ছিল না। বাইরে থেকে কোনো ব্যক্তি শরীরে কাপড়চোপড়ে উকুন ইত্যাদি নিয়ে এ শহরে পৌঁছালে সেগুলো আপনা আপনি মরে সাফ হয়ে যেত।

 

কিন্তু সাবা নগরীর অধিবাসীরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার পরিবর্তে আল্লাহর অবাধ্য হলো। ফলে তাদের ওপর আজাব এসে গেল। পবিত্র কোরআনে সেই আজাবের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তারা অবাধ্য হলো, ফলে আমরা তাদের ওপর প্রবাহিত করলাম ‘আরেম’ বাঁধের বন্যা এবং তাদের উদ্যান দুটিকে পরিবর্তন করে দিলাম এমন দুটি উদ্যানে, যাতে উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউগাছ এবং সামান্য কিছু কুল গাছ।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১৬)

 

 

তারা যখন আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে অস্বীকার করল, তখন আল্লাহ তাদের বাঁধভাঙা বন্যা দ্বারা ধ্বংস কারার ইচ্ছা করলেন, তাদের শক্তিশালী সেই বাঁধের গোড়ায় অন্ধ ইঁদুর নিয়োজিত করে দিলেন। তারা এর ভিত্তি দুর্বল করে দিল। বৃষ্টির মৌসুমে পানির চাপে দুর্বল ভিতের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হয়ে গেল। অবশেষে বাঁধের পেছনে সঞ্চিত পানি সমগ্র উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ল। শহরের সব ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হলো এবং গাছপালা উজাড় হয়ে গেল। পাহাড়ের কিনারায় দুই সারি উদ্যানের পানি শুকিয়ে গেল। কোনো কোনো বর্ণনাকারীর মতে বাঁধের কাছে ইঁদুর দেখে তারা বিপত্সংকেত বুঝতে পারল। ইঁদুর নিধনের উদ্দেশ্যে তারা বাঁধের নিচে অনেক বিড়াল ছেড়ে দিল, যাতে ইঁদুররা বাঁধের কাছে আসতে না পারে। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্ত প্রতিরোধ করার সাধ্য কার?

captcha