মহান আল্লাহ বলেন, ‘বরং তারা বলল, এসব অলীক কল্পনা। হয়তো সে তা রচনা করেছে, না হয় সে একজন কবি। অতএব সে আমাদের কাছে এমন নিদর্শন নিয়ে আসুক, যেমন নিদর্শনসহ পূর্ববর্তীদের পাঠানো হয়েছিল। তাদের আগে যেসব জনপদ আমি ধ্বংস করেছি এর অধিবাসীরা ঈমান আনেনি, তবে কি তারা ঈমান আনবে?’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৫৬)
তাফসির : উল্লিখিত আয়াতে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কাফিরদের বিভিন্ন মন্তব্য বর্ণিত হয়েছে।
তারা মহানবী (সা.)-কে জাদুকর ও পবিত্র কোরআনকে জাদু বলে অভিহিত করেছিল। কখনো অলীক কল্পনা, কখনো মনগড়া কথাবার্তা বা কখনো কবিতা হিসেবে আখ্যায়িত করে। কারণ মহানবীর ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপে তারা ছিল অস্থির। ইরশাদ হয়েছে, ‘দেখুন, তারা আপনার জন্য কত রকম উদাহরণ পেশ করছে, ফলে তারা বিভ্রান্ত হয়েছে এবং কোনো সঠিক পথে চলতে তারা সক্ষম নয়। ’ (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৯)
তাদের কথা হলো, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্যিই নবী হয়ে থাকলে সে যেন আগের নবীদের মতো আমাদের জন্য নতুন কোনো নিদর্শন নিয়ে আসে। যেমন—সালেহ (আ.)-এর উট, মুসা (আ.)-এর লাঠি ও হাত এবং ঈসা (আ.)-এর মৃতকে জীবিত করা ও বধিরকে সুস্থ করা ইত্যাদি। এ প্রশ্নের জবাবে মহান আল্লাহ তাদের দাবিকে মিথ্যা আখ্যায়িত করেন। কারণ আগেও এসব দাবি বাস্তবায়নের পরও অনেকেই ঈমান আনেনি। তখন তাদের পুরো জনপদসহ ধ্বংস করা হয়। এখন মক্কার কাফিররা কি নিদর্শন দেখার পর ঈমান আনবে? ‘নিশ্চয়ই যাদের বিরুদ্ধে আপনার রবের সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা কখনো ঈমান আনবে না। যদিও তাদের কাছে সব নিদর্শন আসে যতক্ষণ না তারা কঠিন শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ’ (সূরা ইউনুস, আয়াত : ৯৬-৯৭)
প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ তাদের দাবি অনুসারে মহানবী (সা.)-কে অসংখ্য মুজিজা বা অলৌকিক নিদর্শন দিতে পারতেন। কিন্তু এসব দেখেও তারা ঈমান না আনলে তাদের পুুরো জনপদসহ ধ্বংস করা হতো। ইরশাদ হয়েছে, ‘পূর্ববর্তীরা (কাফিররা) নিদর্শনের বিষয়টি অস্বীকার করেছিল, তাই আমি নিদর্শন পাঠানো থেকে বিরত থাকি। আমি সামুদ জাতিকে শিক্ষণীয় হিসেবে উষ্ট্রী দিয়েছিলাম, অতঃপর তারা এর প্রতি জুলুম করে, আমি শুধু ভয় দেখাতেই নিদর্শনগুলো পাঠাই। ’ (সূরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৫৯)
তবে এই উম্মতের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হলো, তিনি তাত্ক্ষণিক আজাব দিয়ে পুরো জাতিকে ধ্বংস করেন না; বরং আখিরাতের জন্য এসব শাস্তি রেখে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার রব পরম ক্ষমাশীল দয়াবান, তাদের কৃতকর্মের জন্য যদি তিনি তাদের পাকড়াও করতে চাইতেন তাহলে অবশ্যই তিনি তাদের শাস্তি ত্বরান্বিত করতেন; কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে প্রতিশ্রুত মুহূর্ত, যা থেকে তারা কখনো কোনো আশ্রয়স্থল পাবে না। ’ (সূরা কাহাফ, আয়াত : ৫৮)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি কখনো মনে করবেন না যে জালিমদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ গাফিল, তিনি তাদের সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন তাদের চোখগুলো স্থির হয়ে থাকবে। ’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪২)
গ্রন্থনায় : মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ