IQNA

ইমাম হাদী ( আ: ) -এর কিছু অমিয় বাণী

16:49 - February 05, 2022
সংবাদ: 3471383
তেহরান (ইকনা): ৩ রজব মহানবী সা) - এর আহলুল বাইতের আ:) দশম ইমাম আলী আন নাকী আল- হাদী ( আ:) - এর শাহাদাৎ দিবস ।

২৫৪ হিজরী সালের ৩ রজব ত্রয়দশ আব্বাসীয় খলীফা আল- মু'তাযযের নির্দেশে  ইমাম হাদী ( আ:)কে যে বিষ প্রয়োগ করে শহীদ করা হয়। তাঁর ইমামত কাল ছিল ৩৩ বছর । শাহাদাতের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৪০ বছর মতান্তরে ৪২ বছর এবং কারো কারো মতে আরো বেশী ।

     এখন আমরা ইমাম হাদী ( আ : ) - এর কতিপয় অমিয় বাণী নীচে উল্লেখ করছি :

     ১. ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :

الحِکْمَةُ لَا تَنْجَعُ فِيْ الطِّبَاعِ الْفَاسِدَةِ

হিকমত ( প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী ) ফাসিদ ( দুর্নীতি পরায়ণ corrupt ) প্রকৃতির ব্যক্তিদের অন্তরে প্রভাব বিস্তার করে না ।

      ২. ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :

الْمُصِیْبَةُ لِلصَّابِرِ وَاحِدَةٌ وَ لِلْجَازِعِ اثْنَانِ

ধৈর্যশীল ব্যক্তির ( সাবির ) মুসিবত ( বিপদ ) হচ্ছে একটি এবং ( বিপদাপদে ভীত হয়ে ) অস্থির চিত্ত অধৈর্যশীল ব্যক্তির ( জাযি' جَازِع ) মুসিবত হচ্ছে দুটি ।

     ৩.  ইমাম হাদী ( আ: ) বলেন :

مَنْ رَضِيَ عَنْ نَفْسِهِ , کَثُرَ السّاخِطُوْنَ عَلَیْهِ .

যে ব্যক্তি শুধু নিজের ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকবে তার প্রতি অসন্তুষ্ট ব্যক্তিদের সংখ্যা বেশি হবে । ( অর্থাৎ আত্মতুষ্ট ব্যক্তির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশকারীদের সংখ্যা অধিক ; এ ধরনের ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করে না । )

    ৪. ইমাম হাদী ( আ :) বলেন :

اُذْکُرْ مَصْرَعَکَ بَیْنَ یَدَيْ أَهْلِکَ ,فَلَا طَبِیْبَ یَمْنَعُکَ وَ لَا حَبِیْبَ یَنْفَعُکَ.

ঐ সময়ের কথা স্মরণ করো যখন তুমি তোমার পরিবারের মোকাবেলায় দাঁড়াও ( অর্থাৎ স্বীয় পরিবারের সাথে তোমার দ্বন্দ্ব ও ঝগড়া , বিবাদ এবং মতপার্থক্য হতে থাকে অর্থাৎ স্বামী - স্ত্রীর মাঝে সুসম্পর্ক বিদ্যমান থাকে না এবং কার্যত তারা পরস্পর শত্রুতে পরিণত হয় ) ; আর এমতাবস্থায় কোনো চিকিৎসক না তোমার মৃত্যু ঠেকাতে পারবে ، না কোনো বন্ধু তোমার উপকার সাধন করতে পারবে ।

   ৫. ইমাম হাদী ( আ: ) বলেন :

اَلْمَقَادِیْرُ تُرِیْکَ مَا لَا یَخْطُرُ بِبَالِکَ

ভাগ্য তোমাকে এমন সব বিষয় দেখায় যা তুমি কখনো চিন্তাও কর নি এবং ভেবেও দেখ নি ।

   ৬. ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :

اَلنَّاسُ فِي الدُّنْیَا بِالأَمْوَالِ ، وَ فِيْ الْأٰخِرَةِ بِالْأَعْمَالِ .

      এ দুনিয়ায় ( পার্থিব জগতে ) মানুষের ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন  হয় অর্থ ও ধনসম্পদের ভিত্তিতে এবং আখেরাতে  ( পরকাল ) তার ( মানুষ ) ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন হবে তার সৎ কর্মের ভিত্তিতে ।

    ৭.ইমাম হাদী ( আ: ) বলেন :

اَلْهَزْلُ فَکَاهَةُ السُّفَهَاءِ وَ صَنَاعَةُ الْجُهَّالِ

ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হচ্ছে নির্বোধ ও আহমকদের আনন্দ  এবং মুর্খ ও অজ্ঞদের কর্ম ।

    ৮.ইমাম হাদী আ বলেন :

اَلسَّهْرُ أَلَذُّ لِلْمَنَامِ ، وَ الْجُوْعُ یَزِیْدُ فِيْ طِیْبِ الطَّعَامِ .

( ইবাদৎ বন্দেগীর জন্য ) রাত জাগরণ ঘুমকে অধিক মধুর ও সুখকর করে  এবং ক্ষুধা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে ।

     ৯. ইমাম হাদী আ বলেন :

أَکْثِرْ مِنَ الاِسْتِغْفَارِ وَ الْحَمْدِ ، فَإِنَّکَ تُدْرِکُ بِذٰلِکَ الْخَیْرَ کُلَّهُ .

( মহান আল্লাহর কাছে) অধিক অধিক ইস্তিগফার ( ক্ষমা প্রার্থনা ) ও ( তাঁর ) প্রশংসা - স্তুতি ( হামদ )

কর ; তাহলে এই ইস্তগফার ও প্রশংসা-স্তুতির মাধ্যমে সকল কল্যাণ ও মঙ্গল লাভ করবে ।

   ১০ . ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :

لَا تَطْلُبِ الصَّفَا مِمَّنْ کَدَّرْتَ عَلَیْهِ ، وَ لَا الْوَفَاءَ لِمَنْ غَدَرْتَ بِهِ ، وَ لَا النُّصْحَ مِمَّنْ صَرَفْتَ سُوْءَ ظَنِّهِ إِلَیْهِ ، فَإِنَّمَا قَلْبُ غَیْرِکَ کَقَلْبِکَ لَهُ .

যার জীবনকে তুমি তিমিরাচ্ছন্ন করেছ তার কাছ থেকে আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতা অন্বষণ ( প্রত্যাশা ) করো না ; যার বিরুদ্ধে তুমি ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছ তার কাছ থেকে প্রত্যাশা করো না যে সে তোমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে ; যে ব্যক্তির ব্যাপারে তুমি কুধারণা পোষণ করেছ তার কাছ থেকে তুমি প্রত্যাশা করতে পার না যে সে তোমার কল্যাণ কামী হবে ও তোমাকে হিতোপদেশ দেবে । কারণ  তোমার হৃদয়  অন্যের প্রতি যেমন  অন্যের হৃদয়ও  তোমার প্রতি ঠিক তেমন ।

     ১১ . ইমাম হাদী ( আ:) বলেন :

رَاکِبُ الْحَرُوْنِ ،أَسِیْرُ نَفْسِهِ ، وَ الْجَاهِلُ أَسِیْرُ لِسَانِهِ

যে ব্যক্তি নিশ্চল ও স্থির বাহনে চড়ে বা আরোহন করে সে স্বীয় নফসের ( প্রবৃত্তি ও রিপু ) কাছে বন্দী হয়ে যায় এবং জাহিল ( অজ্ঞ ) স্বীয় জিহ্বার ( অজ্ঞতা ) কাছে বন্দী থাকে । ( অর্থাৎ

নিশ্চল ও স্থির বাহনে চড়া ও আরোহণে মানুষের মনে এক ধরনের গর্ব ও অহংকারের উদ্ভব হয় যা তার (মানুষ ) প্রবৃত্তি ও রিপু প্রসূত । )

    মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইমাম আলী আল - হাদী ( আ: ) - এর  প্রজ্ঞাপূর্ণ এ সব অমিয় বাণী আমল ও পালন করার তৌফিক দিন । পবিত্র কুরআন অনুশাসন , মহানবী ( সা: ) এবং তাঁর আহলুল বাইত ( আ: ) - এর শিক্ষা ও সুন্নাহ যদি আমরা ঠিক ভাবে মেনে চলি তাহলে আমরা জীবনের সব ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারব এবং আমাদের জীবন হবে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ।

 

 

সূত্র : শেখ আব্বাস কোম্মী প্রণীত নেগহী বে যেন্দেগনীয়ে চাহরদাহ মা'সূম ( আ: ) , পৃ : ৪৪৬-৪৪৮ থেকে সংকলিত ও অনূদিত

 

অনুবাদ : ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওলায় মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

     

captcha