পবিত্র কুরআনের একত্রিশতম সূরার নাম লুকমান। ২১ পারায় অবস্থিত এই সূরায় মোট ৩৪টি আয়ার রয়েছে। এটি ৫৭তম সূরা যা ইসলামের নবীর (সা.) উপর অবতীর্ণ হয়েছে।
এই সূরাটিকে লুকমান বলা হয় কারণ এই সূরাতে লুকমানের নাম দুবার এসেছে এবং এটিই একমাত্র সূরা যা এই ঐশ্বরিক হাকিমের (পণ্ডিত) কথা বলা হয়েছে। হযরত দাউদ (আ.)-এর যুগে যে সকল পণ্ডিত বসবাস করতেন তাদের মধ্যে লুকমান ছিলেন অন্যতম। তাঁর জন্মস্থান এবং আয়ুষ্কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে, তবে গভীর চিন্তাভাবনা, অগাধ বিশ্বাস ও দৃঢ়তা, নীরবতা, বিশ্বস্ততা, সত্যবাদিতা এবং মানুষের মতভেদ সমাধান করা লুকমানের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সূরায় হযরত লুকমান তার ছেলেকে একজন পরোপকারী পিতা হিসেবে উপদেশ দিয়েছেন। ছেলের প্রতি হযরত লুকমানের উপদেশসমূহ হচ্ছে, একেশ্বরবাদ এবং আল্লাহর সাথে শরীক না করা, পিতা-মাতাকে সম্মান করা এবং তাদের আনুগত্য করা, নামাজ পড়া, ভাল কাজের আদেশ করা এবং খারাপ কাজের নিষেধ করা, ধৈর্য, নম্রতা, অহংকারী না হওয়া এবং নরম ও শান্ত কথাবার্তা।
এছাড়াও, এই সূরাটি মানুষকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছে; একদল সৎ ও ধার্মিক এবং দ্বিতীয় দল বিপথগামী ও অহংকারী। অতঃপর তিনি তাদের আমল, গুণাবলী ও নিদর্শনের কিছু অংশ ব্যাখ্যা করেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় দলের কাজের পরিণাম দেখান।
এই সূরার আয়াতের অন্য একটি অংশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পৃথিবী ও আসমানসমূহ মহাশূন্যের মাঝখানে কোন সাপোর্ট ছাড়া এবং স্তম্ভ ছাড়া এবং অদৃশ্য ভিত্তির মাধ্যমে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়াও, এই সূরায় তিনি একেশ্বরবাদের লক্ষণ, মহান আল্লাহ জ্ঞান, সর্বশক্তিমান আল্লাহর শক্তি ও মহত্ত্ব, আল্লাহর অস্তিত্বের কারণ ও প্রমাণগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এই সূরার অন্য একটি অংশে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ বিচার দিবসের কিছু দৃশ্য, সম্পদ এবং চিত্তাকর্ষক পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন, যা এই নশ্বর ও ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে মানুষের অজানা।
সূরার শেষ অংশে পাঁচটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে যেগুলো সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই জানেন; পাঁচটি বিষয় হল: কেয়ামতের সময়, বৃষ্টিপাত ও তার ফোঁটার সংখ্যা এবং এর প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য, মায়েদের গর্ভে যা থাকে; ভাগ্য যা মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে; কোথায় এবং কিভাবে মানুষ মারা যাবে?