IQNA

গাজার নারীদের ওপর ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ পাশ্চাত্যের আসল চেহারা স্পষ্ট করেছে

ইসরাইল কেন ইচ্ছা করেই গাজার নারীদের হত্যা করছে?

2:26 - March 09, 2024
সংবাদ: 3475207
ইকনা: আজ ৮ মার্চ উদযাপন করা হচ্ছে নারী দিবস। সমাজে নারীর ভূমিকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এই দিনেও আধুনিক বিশ্ব-সমাজ গাজার নারীদের শোচনীয় অবস্থা সম্পর্কে নীরব ও নিষ্ক্রিয়।

ইসরাইলের নির্বিচার গণহত্যা ও অপরাধযজ্ঞের হাত থেকে গাজার নারী ও শিশুদের রক্ষার এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানকার প্রায় ৬০ শতাংশ গর্ভবতী নারী পুষ্টিহীনতা ও শরীরে পানি-স্বল্পতার শিকার। গাজার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক তথা ৪৯ শতাংশ হচ্ছে নারী। প্রতি মাসে গাজার প্রায় ৫ হাজার নারী বোমা-বর্ষণ ও যুদ্ধের নিরাপত্তাহীন, অস্বাস্থ্যকর ও শরণার্থী জীবনের হাজারো অবর্ণনীয় সংকটের মধ্যে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। দখলদার ইসরাইল প্রতিদিন গাজার ৬৩ জন নারীকে হত্যা করছে। শহীদ এই নারীদের মধ্যে ৩৭ জন হলেন মা।

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় শহীদ নারীর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় আহত ৭২ হাজার১৫৬ জন ফিলিস্তিনির ৭৫ শতাংশই হলেন নারী। গাজার নিখোঁজ হওয়া সাত হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। গাজার নারীরা আজ বিশ্বে সবচেয়ে মজলুম নারী।

দখলদার ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার নারী ও শিশুদের হত্যা করছে। কিন্তু কেন? এর উত্তর হল ইসরাইল মনে করে একজন ফিলিস্তিনি মাতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতই ভূমিকা রাখছেন। তারা নিজ সন্তানদের ফিলিস্তিনি আত্মপরিচয়ের শিক্ষা দিয়ে বড় করছেন। এ ছাড়াও ফিলিস্তিনি নারী সমাজ সেখানকার পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিরোধ সংগ্রামে ভূমিকা রাখছে এবং ভূমিকা রাখছে ফিলিস্তিনের উন্নয়নের নানা পর্যায়ে। তাই ফিলিস্তিনি মায়েদের বা নারীদের হত্যা করে ইসরাইল ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর ভিত্তিকে ধ্বংস এবং ফিলিস্তিনের উন্নয়ন ও প্রতিরোধ সংগ্রামকে দুর্বল করতে চায়। আসলে ফিলিস্তিনি জাতির অন্যতম প্রধান ভিত্তিমূল নারী সমাজকে ধ্বংস করে গোটা ফিলিস্তিনি জাতিকেই ধ্বংস করতে চায় ইসরাইল। 


গাজার নারীরা পরিকল্পিত ইসরাইলি আগ্রাসনের আওতায় নানা ধরনের নির্যাতন, অপরাধযজ্ঞ ও সংকটের শিকার
গাজায় নিহত নারীর সংখ্যা নয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে, আহত ২৩ হাজার এবং নিখোঁজ ২ হাজার ১০০ জন। গাজার ৬০ হাজার গর্ভবতী নারী নিরাপত্তাহীনতা, দুর্ভিক্ষ, ক্ষুধা ও বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাসহ নানা ধরনের কঠিন বিপর্যয়ের শিকার। গাজার শত শত নারী হারিয়েছেন তাদের সন্তান, স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের। তাদের অনেকেই জন্ম দিচ্ছেন মৃত সন্তান এবং অনেকেরই ঘটে গেছে অনিচ্ছাকৃত গর্ভপাত। হত্যাযজ্ঞ, গ্রেফতার, সংক্রামক রোগ বা মহামারীর মত সংকট ছাড়াও এমনকি ইসরাইলি সেনাদের হাতে অপহরণ, কারাবাস, ধর্ষণ ও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গাজার অনেক নারী।

বিশ্ব-সমাজ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো গাজার নারীদের সুরক্ষার জন্য কিছুই করতে পারেনি এবং এ বিষয়ে যতটা সোচ্চার ও সক্রিয় হওয়া দরকার ছিল তার তুলনায় খুবই দুর্বল ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের স্থায়ী মিশন গাজায় নারী ও শিশুসহ বেসামরিক জনগণের ওপর একটানা ও নির্বিচার বোমা বর্ষণের অপরাধে এ বিশ্ব সংস্থার নারী বিষয়ক শাখা বা কমিটিগুলো থেকে বর্ণবাদী ও দখলদার ইসরাইলকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। ইসরাইলি বোমা বর্ষণে গাজার হাজার হাজার নারীর নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইরানি মিশনের এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে।

উল্লেখ্য গাজায় হাজার হাজার নারীর ওপর ইসরাইলী গণহত্যা সম্পর্কে কথিত নারী-দরদি ও মানবাধিকারকামী পশ্চিমা সরকারগুলো নীরব থাকলেও এইসব সরকার প্রায় বছর দেড়েক আগে ইরানে অসুস্থতার কারণে নারী পুলিশের হেফাজতে এক কুর্দি যুবতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হৈ-চৈ ও ইরান-বিরোধী নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করে এবং এইসব সরকারের পোষ্য সংবাদমাধ্যমগুলোও সামাজিক মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক মিথ্যা প্রচারে মেতে ওঠে। কিন্তু গাজার নারী সমাজের ওপর ইসরাইলি নির্যাতন সম্পর্কে এইসব মহলের নীরবতা তাদের মানবাধিকারকামিতা ও নারী অধিকারকামিতার আসল চেহারা তুলে ধরেছে সচেতন বিশ্ববাসীর কাছে।# 

পার্সটুডে

captcha